নারীর অধিকার ও মর্যাদায় ইসলাম
নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন। (আলে-ইমরান-১৯)। আর এই দ্বীনে রাব্বে কারীম নারীর মর্যাদাকে উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। নর-নারীর সমন্বয়েই মানব জাতি। নারী জাতি হল রাব্বে কারীমের বিশেষ এক নিয়ামত। রাব্বে কারীম নারীকে পুরুষের জীবন সঙ্গিনী হিসাবে মানব জীবন পরিচালনার জন্য পারস্পরিক সহযোগি করেছেন। ইসলাম মর্যাদার দিক দিয়ে নারীকে পুরুষের থেকে ভিন্ন করে দেখেনি। বরং ইসলামের আগমনেই নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত নারী সমাজ পেয়েছে মুক্তির সন্ধান। সারা দুনিয়াতে যখন নারীরা নিদারুণ অবস্থায় কালাতিপাত করছিল, আরব, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে তাদেরকে জন্তু-জানোয়ার বলে মনে করা হত এবং মানুষ হিসাবে তাদের কোন মর্যাদা ও অধিকার স্বীকার করা হত না, তখন ইসলাম নারীর যথাযথ অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করে নারী জাতিকে সম্মানের সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। যেমন: রাব্বে কারীম পুরুষদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, هُنَّ لِبَـاسٌ لَّكُمْ وَاَنْتُمْ لِبَاسُ لَّهُنَّ ‘তারা তোমাদের পোষাকস্বরুপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরুপ’ (আল-বাকারাহ্-১৮৭) তিনি আরো বলেন,
يايُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِىْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسِ وَّاحِدَةِ وَّخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَّنِسَاءً وَّتَّقُوْا اللّهَ الَّذِى تَسَاءلُوْنَ بِه وَالْاَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا.
‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ হক দাবী কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আতœীয়ের ব্যাপারেও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। (আন-নিসা-১)
يايُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِىْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسِ وَّاحِدَةِ وَّخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَّنِسَاءً وَّتَّقُوْا اللّهَ الَّذِى تَسَاءلُوْنَ بِه وَالْاَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا.
‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ হক দাবী কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আতœীয়ের ব্যাপারেও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। (আন-নিসা-১)
ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা :
মর্যাদা অর্থ- গৌরব, সম্ভ্রম, সম্মান, মূল্য ইত্যাদি। আর নারীর মর্যাদা বলতে নারীর ন্যায়-সঙ্গত অধিকারকে বুঝায়। আর অধিকার অর্থ প্রাপ্ত, পাওনা ইত্যাদি। কারো অধিকার প্রদানের অর্থ হচ্ছে তার প্রাপ্ত বা পাওনা যথাযথভাবে প্রদান করা। আর এ প্রাপ্ত বা পাওনা যথাযথভাবে প্রদান করা। আর প্রাপ্ত বা পাওনা বলতে তার অধিকারের স্বীকৃতি,কর্তব্যের সঠিক বিশ্লেষণ ও সামাজিক জীবনে তার অবদানের যথার্থ মূল্যায়নই বুঝানো হয়। অতএব যদি কারো ন্যায্য অধিকার স্বীকার না করা হয়, অথবা তার কর্তব্যে বাধা দান বা তার সামর্থ্যরে অধিক কোন দায়িত্ব-কর্তব্য তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, কিংবা তার অবদান সমূহের সঠিক মূল্যায়ন না করা হয়, তাহলে তার অধিকার ও মর্যাদা খর্ব করা হবে এবং তার প্রতি অবিচার করা হবে। আর যখন তার অধিকার সমূহ স্বীকার করা হয়, তার সামর্থ্য অনুসারে তাকে দায়িত্ব-কর্তব্য আদায় করার পূর্ণ সুযোগ দান করা হয় এবং সামাজিক জীবনে তার অবদান সমূহের মূল্যায়ন করা হয়, তখন তার উপযুক্ত মর্যাদা দান করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়।ইসলাম পূর্ব যুগে নারীর অবস্থান :
ইসলাম পূর্ব যুগে নারী ছিল সবচেয়ে অবহেলিত, লাঞ্চিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত এবং অধিকার হারা জাতি। সে সময় নারীকে ভোগ-বিলাসের উপকরণ এবং বাজারের পণ্য হিসাবে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হত না এবং তাদের কোন সামাজিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না। এমনকি মানব জাতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে সমাজে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও ছিল না। তাদের প্রতি খুবই কঠোর আচরণ করা হত। সে যুগে নারীদেরকে মনে করা হত দাসী এবং ভারবাহী পশু হিসাবে। যাদেরকে ক্রয়-বিক্রয় করা হত। সে আমলে স্বামী যত খুশি স্ত্রী গ্রহণ করত এবং ইচ্ছা করলে তার স্ত্রীকে অপরের কাছে বিক্রি করে দিতে পারত কিংবা স্ত্রীকে দিয়েই কেউ ঋণ পরিশোধ করত। আবার কেউ উপহার হিসাবে কাউকে এমনিই দিয়ে দিত। তারা কন্যা সন্তান জন্মকে লজ্জাজনক মনে করে স্বীয় নিষ্পাপ কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতেও কুন্ঠিত হত না। তাদের এমন বিবেক বর্জিত কর্ম সম্পর্কে রাব্বে কারীম বলেন, وَإِذَا الْمَوْءدَةُ سُئِلَتْ.بِأَيِّ ذَنْبِ قُتِلَتْ.‘আর যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? (আত-তাকভীর-৮-৯)।
সেযুগে তারা পিতা-মাতা বা স্বামীর মৃত্যুর পর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হত। পিতৃহীনা সুন্দরী-ধনবতী বালিকার অভিভাবক যথাযথ মোহর দানে তাকে বিবাহ করতে সম্মত হত না। আবার অন্যত্র বিবাহ দিতেও অসম্মতি প্রকাশ করত। সুন্দরী বাঁদী দ্বারা দেহ ব্যবসা করিয়ে অর্থ উপার্জন করা হত। এ গর্হিত কাজ হতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে রাব্বে কারীম এ আয়াত অবতীর্ণ করেন, وَلَا تُكْرِهُوْا فَتَيتِكُمْ عَلَى الَبِغَآءِ اِنْ اَرَدْنَ تَحَصُّنًا لِّتَبْتَغُوْا عَرَضَ الّحَيوةِ الدّنْيَا.
‘আর তোমাদের দাসীরা লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে দুনিয়ার জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না। (আন-নূর-৩৩) উল্লিখিত যুগে একের অধিক নারী বিবাহ করে তাদের নায্য পাওনা হতে বঞ্চিত করা হত। তাদেরকে তালাক দিয়ে অন্যত্র স্বামী গ্রহণের অবকাশও দেওয়া হত না। এ জাতীয় অমানবিক ও অমানুষিক যুলুম অত্যাচার নারী জাতির উপর করা হত।
বিভিন্ন ধর্ম ও সভ্যতায় নারী :
বিভিন্ন ধর্ম ও সভ্যতায় নারীদের অবস্থান তুলে ধরা হল-
হিন্দু ধর্মে : নারীদেরকে বলী দেওয়া হত এবং এ ধর্মে সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। এছাড়াও এ ধর্মে নারীরা পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত। হিন্দু ধর্মে নারীদের অতীব হীন ও নীচু স্তরের প্রাণী মনে করা হত। এ দিকে ইঙ্গিত করেই চৎড়ভবংংড়ৎ ষহফরধ গ্রন্থে বলা হয়েছে,ঞযবৎব রং হড় পৎবধঃঁৎব সড়ৎব ংরহভঁষ ঃযধহ ড়িসধহ. ডড়সধহ রং নঁৎহরহম ভরৎব. ঝযব রং ঃযব ংযধৎঢ় বফমব ড়ভ ঃযব ৎধুড়ৎ ংযব রং াবৎরষু ধষষ ঃযবৎব রহ ধ নড়ফু. অর্থাৎ ‘নারীর ন্যায় এত পাপ-পঙ্কিলতাময় প্রাণী জগতে আর নেই। নারী প্রজ্জ্বলিত অগ্নি স্বরুপ। সে ক্ষুরের ধারালো দিক। এই সমস্তই তার দেহে সন্নিবিষ্ট’। নারীদের প্রতি ঘৃণাভরে বলা হয়েছে, গবহ ংযড়ঁষফ হড়ঃ ষড়াব ঃযবরৎ অর্থাৎ ‘নারীদেরকে ভালবাসা পুরুষদের উচিৎ নয়’। বৌদ্ধ ধর্মে : বৌদ্ধ ধর্মে নারীকে সকল পাপের জন্য দায়ী করা হত। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ওয়েষ্টমার্ক বলেন, অর্থাৎ ‘মানুষের জন্য প্রলোভনের যতগুলি ফাঁদ বিস্তার করে রেখেছে, তন্মধ্যে নারীই সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক। নারীর মধ্যে সকল মোহিনী শক্তি অঙ্গীভুত হয়ে আছে, যা সমস্ত বিশে^র মনকে অন্ধ করে দেয়’।
ইহুদী ধর্মে : এ ধর্মে নারীর প্রকৃতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সতী নারীর চেয়ে পাপিষ্ট পুরুষও শতগুণে ভাল’। তারা নারীকে যাবতীয় পাপ ও মন্দের মূল কারণ হিসাবে গণ্য করেছে।
খৃষ্টান ধর্মে : খৃষ্টধর্ম মতে নারীরাই নরকের প্রবেশ দ্বার। সপ্তদশ শতাব্দীতে ‘কাউন্সিল অব দ্যা ওয়াইজ’-এর অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ‘নারীর কোন আতœা নেই’।
চীন সভ্যতায় : চীন দেশের নারীদের অবস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে জনৈকা চীনা নারী বলেন, ‘মানব সমাজে নারীদের স্থান সর্বনিন্মে অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস। নারী সর্বাপেক্ষা হতভাগ্য প্রাণী। জগতে নারীর মত নিকৃষ্ট আর কিছু নেই’।
গ্রীক সভ্যতায় : বিশ^খ্যাত গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস বলে‘নারী জগতে বিশৃংখল ও ভাঙ্গনের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস’।
রোম সভ্যতায় : রোম সভ্যতায় পরিবারের নেতা ও পরিচালক পিতা বা স্বামী নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের উপর নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী ছিল। তারা যখন ইচ্ছে তখনই নারীকে ঘর থেকে বহিস্কার করে দিত।
বর্তমান বিশ্বে নারীর অধিকার ও মর্যাদা :
বর্তমান বিশে^ও নারীর যথাযথ অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার হতে তাদেরকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে তাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। পাশ্চাত্যবাদীরা নারী স্বাধীনতার নামে নারীদের ঘরছাড়া করেছে। ইসলাম নারীদেরকে মর্যাদার যে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল, পাশ্চত্যবাদীরা তা ক্ষুণœ করে নারীদের আবার অনাচার আর দুস্কর্মের শৃংখলে বন্দী করে ফেলেছে।পাশ্চাত্যবাদীরা পারিবারিক বন্ধনকে ভেঙ্গে নারীদেরকে নিজেদের অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে গড়ে তুলছে। আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে এমনকি আমাদের দেশেও ৮৫% নারী ধনতন্ত্রবাদের সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দেয়। পাশ্চাত্য সভ্যতা আজ নারীদেরকে অপরের ইচ্ছার পুতুল বানিয়ে তাদেরকে বাজারের পণ্য ও ফ্যাশনের প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করছে এবং খদ্দেরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নারীদের বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে। যেমন- নারীদের নগ্ন ও অশ্লীল ছবি, নারী বিষয়ক নানান অশ্লীল গল্প, কবিতা, উপন্যাস, অশ্লীল সিনেমা ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সারা বিশে^ ছড়িয়ে দিয়েছে। ফলে যুব সমাজ এমনকি বৃদ্ধদেরও মানষিক বিকৃতি ঘটছে। এভাবে পাশ্চাত্য সভ্যতা নারীদেরকে তাদের উন্নত মর্যাদার আসন থেকে টেনে নীচে নামিয়ে আনছে। অল্প কথায়, নারীর মর্যাদা দানের পরিবর্তে নারী জাতির প্রতি দিন দিন অমর্যাদা ও অবমাননাই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ইসলামের ভুমিকা :
মানব সৃষ্টির প্রথম দিকে রাব্বে কারীম আদি পিতা আদম আ.-কে সৃষ্টি করার পর তাঁর সহধর্মিনী হিসাবে তাঁরই বাম পাঁজরের একটি হাড় হতে আদি মাতা হাওয়া আ.-কে সৃজন করেন। অতঃপর তাঁদের হতে অসংখ্য নর-নারী সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে রাব্বে কারীম ইরশাদ করেন, يا اَيّهَا النّاسُ اِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرِ وَّاُنْثَى. ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে ’ (আল-হুজুরাত-১৩)।
রাব্বে কারীম এ বিশ^ জগতে অসংখ্য মাখলূকাতের মধ্যে মানব জাতিকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে মর্যাদা দান করেছেন। রাব্বে কারীম বলেন, وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِى آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفّضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيْرِ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلًا.
‘আর অবশ্যই আমি আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সাগরে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; এবং তাদেরকে উত্তম রিয্ক দান করেছি আর আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি’।(বনী-ইসরাঈল-৭০)
রাব্বে কারীম নারী-পুরুষ উভয়কেই সম্মান দিয়েছেন, পুরুষের থেকে নারীকে ভিন্ন ভাবে দেখেননি। বরং যুগ যুগ ধরে অবহেলিত ও উপেক্ষিত নারী সমাজকে পুরুষের সমমর্যাদা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার চেয়ে অধিক মর্যাদা দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে রাব্বে কারীম বলেন, وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِىْ عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ. ‘আর নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের; আর নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা আছে’। (আল-বাকারাহ্-২২৮)
ইসলাম নারীর প্রতি সকল প্রকার অত্যাচার, অবিচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করতঃ নারীকে সর্বক্ষেত্রে অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে। ইসলাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর যে অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে সেগুলো নিন্মে আলোচয়া করা হল-
(ক) বিবাহের মাধ্যমে নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান :
জাহিলী যুগে বৈবাহিক ক্ষেত্রে নারীদের কোনরুপ অধিকার ছিল না। তারা শুধু পুরুষের ভোগের সামগ্রী ছিল। ইসলাম এহেন ঘৃনিত প্রথার মূলোৎপাটন করতঃ নারী ও পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে। এ মর্মে রাব্বে কারীম ইরশাদ করেন, وَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تُقْسِطُوْا فِى الْيَتمى فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنى وَثُلثَ وَرُبعَ فَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً اَوْمَامَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ ذلِكَ اَدْنى اَلَّا تَعُوْلُوْا. ‘আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, দুই, তিন বা চার; আর যদি আশংকা যে সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশী’। (আন-নিসা-৩)
(খ) স্বামী নির্বাচনের স্বাধীনতায় নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান :
ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে নারীদের পসন্দমত স্বামী গ্রহণের কোন অধিকার ছিল না। যখন-তখন তাদেরকে পাত্রস্থ করা হত। কিন্তু ইসলাম নারীকে স্বামী নির্বাচনের স্বাধীনতা দিয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা করলে বলপূর্বক কোন নারীর স্বামী হতে পারবে না। রাব্বে কারীম বলেন, فَلَا تَعْضِلُوْهُنَّ اَنْ يَنْكِحْنَ ‘এরপর তারা যদি বিধিমত পরস্পর সম্মত হয়, তবে স্ত্রীর নিজেদের স্বামীদের বিয়ে করতে চাইলে তোমরা তাদেরকে বাধা দিওনা’। (আল-বাকারাহ্-২৩২)
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ لَا تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتّى تُسْتَأمَرَ وَلَا تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتّى تُسْتَأذَنَ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وكَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ اَنْ تَسْكُتَ.
‘হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলিয়াছেন ঃ বালেগা বিবাহিতা নারীকে বিবাহ দেওয়া যাইবে না যে যাবৎ না তাহার স্পষ্ট অনুমতি গ্রহণ করা হয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তাহার অনুমিত কিরুপে বুঝা যাইবে? (সে তো কথা বলিবে না) তিনি বলিলেন ঃ চুপ থাকাই তাহার অনুমতি’ (মিশকাত-২৯২৯)
(গ) স্ত্রী হিসাবে নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান :
ইসলাম পারিবারিক জীবনে নারীকে দিয়েছে তার ন্যায্য অধিকার। সংসার জীবনে নারী-পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক। কোন একজনের একক প্রচেষ্টায় সংসার জীবন পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। রাব্বে কারীম ইরশাদ করেন, هُنَّ لِبَـاسٌ لَّكُمْ وَاَنْتُمْ لِبَاسُ لَّهُنَّ
‘তারা তোমাদের পোষাকস্বরুপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরুপ’ (আল-বাকারাহ্-১৮৭)
রাসূলূল্লাহ্ সা. বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম চরিত্রের অধিকারী, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের মধ্যে নিজ স্ত্রীদের কাছে উত্তম’।
শুধু তাই নয় নবী কারীম সা. তাঁর বৈবাহিক জীবনে বাস্তব দৃষ্টান্ত পেশ করে পুরুষদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, স্ত্রীর সম্মান ও অধিকার কিভাবে প্রদান করতে হবে। আর স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণ প্রসঙ্গে রাব্বে কারীম বলেন, وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ ‘আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে’। (আন-নিসা-১৯)
(ঘ) মোহর দানের মাধ্যমে নারীর অধিকার ও মর্যাদা :
ইসলাম নারীর মর্যাদার স্বীকৃতি স্বরুপ বিবাহের ক্ষেত্রে মোহর প্রদান অপরিহার্য করে দিয়েছে। রাব্বে কারীম বলেন, وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً.
‘আর তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর মনের সন্তোষের সাথে প্রদান কর;’(আন-নিসা-৪)।
রাসূলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেন, ‘যে শর্তটি পূরণ করা সবচেয়ে জরুরী তাহল ঐ শর্ত- যা দ্বারা তোমরা (স্ত্রীর) লজ্জাস্থান হালাল করো’। অথাৎ ‘মোহর’।
(ঙ) সহবাসের ক্ষেত্রে নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান :
সহবাসের ক্ষেত্রে নারীর শারীরিক কষ্টের বিষয়টি খিয়াল রেখে ঋতু¯্রাব অবস্থায় স্ত্রীর সাথে মেলামেশা ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। রাব্বে কারীম বলেন,
وَيَسْأَلُوْنَ عَنِ الْمَحِيْضِ قُلْ هُوَ اَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسآءَ فِى الْمَحِيْضِ وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّى يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ اَمَرَكُمْ اللّهُ إِنَّ الله يُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ.
‘আর তারা আপনাকে রজঃ¯্রাব (হায়েয) সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে। বলুন, ‘তা অশুচি’। কাজেই তোমরা রজঃ¯্রাবকালে স্ত্রী-সংগম থেকে বিরত থাক এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত (সংগমের জন্য) তাদের নিকটবর্তী হবে না। তারপর তারা যখন উত্তমরুপে পরিশুদ্ধ হবে তখন তাদের নিকট ঠিক সেভাবে গমন করবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাওবাকারীকে ভালবাসেন এবং তাদেরকেও ভালবাসেন যারা পবিত্র থাকে’ (আল-বাকারাহ্-২২২)।
পায়ুপথে সহবাস করা হারাম। তবে পুরুষরা স্ত্রীদের যৌনাঙ্গে যেদিক থেকে ইচ্ছা সহবাস করতে পারে। রাব্বে কারীম এ প্রসঙ্গে বলেন, نِسَآؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ اَنّى شِئْتُمْ. ‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছে গমন করতে পার’ (আল-বাকারাহ্-২২৩)। হাদীসে এসেছে,
عن جابر بن عبد الله قال كانت اليهود تقول إذا أتى الرجل امرأته من دبرها في قبلها كان الولد أحول فنزلت نِسَآؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ اَنّى شِئْتُمْ.
‘জাবির রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, ইহুদীরা বলত , পুরুষ যদি পশ্চাৎদিক হতে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে সঙ্গম করে তাহলে সন্তান ট্যারা হয়। (তাদের এ ভ্রান্ত ধারণা নিরসনের উদ্দেশ্যে) কুরআন মাজীদের এ আয়াত- نِسَآؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ اَنّى شِئْتُمْ.
‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছে গমন করতে পার’
(আল-বাকারাহ্-২২৩)।
(চ) কন্যা হিসাবে অধিকার ও মর্যাদা :
ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবের মহিলাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। সেখানে নারীদের বেঁচে থাকারই কোন অধিকার ছিল না। এমনকি কন্যাসন্তান জন্মকে তারা দূর্ভাগ্য মনে করে জীবন্ত কবর দিত। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন রাব্বে কারীম বলেন,
وَاِذَا بُشِّرَ اَحَدُهُمْ بِالْاُنْثى ظلَّ وَجْهُه مُسْوَدًّا وَّهُوَ كَظِيْمٌ. يَتَوَارى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوْءِ مَا بُشِّرَ بِه اَيُمْسِكُه عَلى هُوْنِ اَمْ يَدُسُّه فِى التُّرَابِ اَلَا سَآءما يَحْكُمُوْنَ.
‘তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সুসংবাদ দেয়া হয়, তার গøানির কারণে সে নিজ সম্প্রদায় হতে আতœগোপন করে। সে চিন্তা করে হীনতা সত্বেও কি তাকে রেখে দেবে, নাকি মাটিতে পুুুঁতে ফেলবে। সাবধান! তারা যা সিন্ধান্ত করে তা কত নিকৃষ্ট!। (আন-নাহ্ল-৫৮-৫৯)।
জাহেলী যুগের প্রথাকে নির্মূল করে কন্যাসন্তান জন্মকে কল্যাণময় ও বড় সৌভাগ্যের বিষয় হিসাবে অভিহিত করত, শুভ সংবাদ প্রদান করেছেন মহানবী সা.। হাদীসে এসেছে,
عن آنس بن مالك قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من عال جاريتين حتّى تبلغا جاء يوم القيامة أنا وهو وضمّ أصابعه.
‘আনাস রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি যদি প্রাপ্তবয়স্কা হওয়া পর্যন্ত দু’টি কন্যার লালন-পালনের দায়িত্ব করে, তাহলে আমি ও সেই ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন এভাবে একত্রে থাকব’)। এই বলে তিনি নিজের আঙ্গুলগুলি মিলিয়ে ধরলেন।
(ছ) মাতা হিসাবে অধিকার ও মর্যাদা :
ইসলাম-পূর্ব যুগে নারীদের কোন সামাজিক অধিকার ও মর্যাদা ছিল না। সে যুগে পিতার ইন্তিকালের পর বিমাতাকে বিবাহ করার মতো ঘৃণ্য প্রথাও প্রচলিত ছিল। ইসলাম এসে নারীকে মাতৃত্বের গৌরব ও মর্যাদা দিয়েছে এবং সন্তানের উপর মায়ের অধিকার ও সার্বিক কর্তৃত্ব সুনিশ্চিত করেছে। শুধু তাই নয়, সন্তানের উপর মায়ের আদেশ মান্য করা, মায়ের সাথে বিন¤্র ও সম্মানজনক আচরণ করাকে ফরয করা হয়েছে। কুরআনে রাব্বে কারীম নিজ হকের সঙ্গে মা-বাবার হকের কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
وَقَضَى رَبُّكَ اَلَّا تَعْبُدُوْآ اِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا اِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَآ اَوْ كِلَهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَآ اُفِّ وَّلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا.وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَنِىْ صِغِيْرًا.
‘আর আপনার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ‘ইবাদাত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তারা একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল। আর মমতাবশে তাদের প্রতি ন¤্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, ‘হে আমার রব! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন’ (বনী-ইসরাঈল-২৩-২৪)
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.-কে জিজ্ঞেস করলেন,আমার সর্বোত্তম ব্যবহার পাবার অধিকারী কে? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তোমার মাতা! আবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? আবারো বললেন, তোমার মাতা, আবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? আবারো বললেন, তোমার মাতা। আবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? এবার রাসূলুল্লাহ্ সা. বললেন, তোমার পিতা।
অপর এক হাদীসে এসেছে, ‘মু‘আবিয়া ইবনে জাহিমাহ একদা মহানবী সা.-এর নিকট যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, যেহেতু তোমার মা আছে যাও তাঁর সেবায় নিয়োজিত হও। কারণفانّ الجنّة تحتَ رجلها. ‘জান্নাত তাঁর পায়ের নিকটে রছেছে’।
)জ) সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে অধিকার ও মর্যাদা :
ইসলাম নারী নির্যাতনমূলক ও নারী মর্যাদার পরিপন্থী সকল প্রকার কুসংস্কার এবং কুপ্রথাকে হারাম সাব্যস্ত করেছে। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর প্রতি সদ্ব্যবহার ও সদাচরণের আদেশ প্রদান করতঃ রাব্বে কারীম বলেন,
وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ فَاِنْ كِرِهْتُمُوْهُنَّ فَعَسَى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّيَجْعَلَ اللهُ فِيْهِ خَيْرًا كَثِيْرًا.
‘আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে; তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ্ যাতে প্রভুত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ’। (আন-নিসা- ১৯)
(ঝ) সম্পদে উত্তরাধিকার করার মাধ্যমে মর্যাদা দান :
ইসলাম মীরাছ বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদে অংশ নির্ধারণ করে দিয়ে নারীদেরকে প্রবঞ্চনা হতে মুক্ত করেছে। রাব্বে কারীম বলেন, يُوْصِيْكُمُ اللهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْاُنْثَيَيْنِ فَاِنْ كُنَّ نِسَآءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَاِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً.
‘রাব্বে কারীম তোমাদের সন্তান সম্বন্ধে নির্দেশ দিচ্ছেন ঃ এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান; কিন্তু শুধু কন্যা দুইয়ের বেশী থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ, আর মাত্র এক কন্যা থাকলে তার জন্য অর্ধেক’। (আন-নিসা-১১)
রাব্বে কারীম আরো বলেন,
وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ اَزْوَاجُكُمْ إِنْ لَمْ يَكُنْ لَّهُنَّ وَلَدٌ فَاِنْ كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمْ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةِ يُّوْصِيِنَ بِهَا آوْ دَيْنِ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ اِنْ لَّمْ يَكُنْ لَّكُمْ وَلَدٌ فَاِنْ كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ.
“তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক তোমাদের জন্য, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে এবং তাদের সন্তান থাকলে তোমাদের জন্য তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ; ওসিয়াত পালন এবং ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের সন্তান না থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ, আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ;”। (আন-নিসা-১২)
(ঞ) শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় নারীর অধিকার ও মর্যাদা :
ইসলাম নারীদেরকে পুরুষের ন্যায় ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনে শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার অধিকার দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেন, طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلى كُلِّ مُسْلِمِ. ‘প্রত্যেক মুসলমানের (নর-নারী) জন্য বিদ্যা অর্জন করা ফরয’।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, قالت عائشة نِعم النّساء يساء الأنصار لم يمنعهنّ الحياء ان يتفقّهنّ في الدّين. ‘আয়শা রা. বলেন, আনছারী মহিলারা কতই উত্তম! দ্বীনি ইলম অর্জনে লজ্জা তাদেরকে আটকে রাখতে পারে না।
(ট) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অধিকার ও মর্যাদা দান :
ইসলাম নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও অধিকার দিয়েছে। জীবিকা অর্জনের অধিকারও দিয়েছে। যেমন রাব্বে কারীম বলেন لِلرِّجَالِ نَصِيْبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُوْا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيْبٌ مِّمّا اكْتَسَبْنَ. ‘পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্ত অংশ’। (আন-নিসা-৩২)।
(ঠ) ইসলামের বিধান পালনে নারীর অধিকার ও মর্যাদা :
ইসলামের বিধান পালনেও নারীদেরকে পুরুষদের মত অধিকার প্রদান করা হয়েছে। সালাত, সিয়াম, হজ্জ্ব প্রভুতি ইবাদতে সে অংশ গ্রহণ করবে পুরুষের ন্যায়। রাব্বে কারীম বলেন, وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنتُ بَعْضُهُمْ آوْلِيَاءُ بَعْضِ يَأمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلوةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَوةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللّهَ وَرَسُوْلَه اُولئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ.
‘আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তারাই, যাদেরকে আল্লাহ্ অচিরেই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (আন-তাওবাহ্-৭১)।
ইসলামের বিধান পালনের ব্যাপারে সওয়াবের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য করা হয়নি। বরং পুরুষ হোক আর নারীই হোক উভয়েই তাদের নিজ নিজ আমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ প্রসঙ্গে রাব্বে কারীম বলেন,
وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصّلِحتِ مِنْ ذَكَرِ اَوْ اُنْثى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ نَقِيْرًا.
‘আর পুরুষ বা নারীর মধ্যে কেউ মুমিন অবস্থায় সৎ কাজ করলে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও যুলুম করা হবে না’। (আন-নিসা-১২৪)।
(ড) কর্মক্ষেত্রে নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান :
নারী যদি আশ্রয়হীন কিংবা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে তাহলে সে তার জীবন-জীবিকার তাকীদে এবং স্বীয় সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে যে কোন হালাল উপায়ে পর্দা রক্ষা করে আয়-রোযগার করার পূর্ণ অধিকার রাখে। যেমন রাব্বে কারীম বলেন,
(ঢ) বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা রমণীর অধিকার ও মর্যাদা :
ইসলাম বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা রমণীর অধিকার নিশ্চিত করেছে। স্বামীর মৃত্যুর পর অথবা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে স্ত্রীদের পুুুুুনরায় বিবাহের অনুমতি প্রদান করত: রাব্বে কারীম বলেন, وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيْمَا عَرَّضْتُمْ بِه مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنْتُمْ فِيْ اَنْفُسِكُمْ. ‘আর যদি তোমরা আকার-ইঙ্গিতে (সে) নারীদের বিয়ের প্রস্তাব দাও বা তোমাদের অন্তরে গোপন রাখ তবে তোমাদের কোন পাপ নেই’। (আল-বাবারাহ্-২৩৫)।
সমাপনী :
নারী কখনো মাতা, কখনো কন্যা, কখনো বোন আবার কখনো স্ত্রী। আর সর্বস্তরেই মহান আল্লাহ্ নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। ঠিক মহানবী সা.ও নারী জাতিকে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে তুলে ধরে বলেন, اَلدُّنْيَا كُلُّهَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ. (দুনিয়া একটি সম্পদ। আর দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ হল পুণ্যবতী স্ত্রী। একজন আদর্শ নারী হল মূল্যবান মণিমুক্তার মতো। আর মণিমুক্তাকে জহুরীরা এমনভাবে সংরক্ষণ করে রাখে যাতে মেকি বা কৃত্রিম পাথরের মতো অতি সহজেই যার তার হাতে ঘোরাফেরা করতে না পারে। একথা সকলেরই জানা আছে যে, ঝিনুকের চেয়ে মুক্তাই বেশী মূল্যবান। আর পবিত্র কুরআনে এই আদর্শ মুসলিম নারীদের মুক্তার সাথেই তুলনা করে বলা হয়েছে। كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُوْنِ ‘সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ’ (আল-ওয়াকিআহ্-২৩)। তবে নারীদের এ মর্যাদা তাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। নারীদের মর্যাদা দানে ইসলামের এসব আদর্শ দেখে খোদ বৃটিশ মহিলাদেরমধ্যে ইসলাম গ্রহণের যথেষ্ট সাড়া পড়েছে। পত্র-পত্রিকার খবর অনুসারে মার্কিন নও মুসলিমদের মধ্যেও পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের সংখ্যা চারগুন বেশী। পত্রিকার মতে ওঃ রং বাবহ সড়ৎব রৎড়হরপ ঃযধঃ সড়ংঃ ইৎরঃরংয পড়হাবৎঃং ংযড়ঁষফ নব ড়িসবহ, মরাবহ ঃযব রিফবংঢ়ৎবধফ ারবি রহ ঃযব বিংঃ ঃযধঃ রংষধস ঃৎবধঃং ড়িসবহ ঢ়ড়ড়ৎষু. অর্থাৎ ‘এটা আরও দুঃখজনক বিষয় যে, অধিকাংশ বৃটিশ নওমুসলিমই মহিলা। অথচ এ মতবাদ গোটা পাশ্চাত্যে বিস্তৃত যে, ইসলাম মহিলাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে’।
আসলে অমুসলিম মহিলাগণ দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে ছুটে এসেছেন ইসলামের সুমহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে। ইসলামে নারীদের মর্যাদা ও অধিকারের নযীরবিহীন দৃষ্টান্ত দেখে। কিন্তু আফসোস! বর্তমানে আমরা নারীরা নিজেদের কারণেই সেই সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুইয়ে নিঃস্ব পথিকের ন্যায় পথে বসতে চলেছি। পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হিজাব তথা নারীদের রক্ষাকবচ পর্দার বিধানকে পদদলিত করে অনুসরণ করছি বিদেশ থেকে আমদানীকৃত নগ্ন সভ্যাতাকে। ফলশ্রæতিতে নারী জাতি প্রতিনিয়ত বখাটে লোলুপ ইভটিজারদের শিকারে পরিণত হচ্ছে।
তাই মুসলিম নারীদের উদাত্ত আহবান জানাই, পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাসীস মোতাবেক জীবন গড়ে নিজেদের হারানো সম্মান ফিরিয়ে আনার। স্বীয় মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার। মহান আল্লাহর নিকট আকুতি জানাই, তিনি যেন আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করে পূর্ববর্তী মহীয়সী রমণী মারইয়াম, হাযেরা, আছিয়া, আয়শা রা., খাদিজা রা., ও ফাতিমা রা.-দের শ্রেণীভুক্ত করেন। রাব্বে কারীম আমাদের সহায় হোন। আমীন।
(আলিমা ফাতিমা তাওহীদ)
প্রধান শিক্ষিকা ও মুহাদ্দিসা অত্র মাদরাসা।
প্রধান শিক্ষিকা ও মুহাদ্দিসা অত্র মাদরাসা।