সকাল সন্ধার অযীফা

আমল নং-১। হাদীস : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব রাযি. বর্ণনা করেন, এক রাত্রে যখন বৃষ্টি হচ্ছিল এবং ভীষণ অন্ধকারও ছিল, তখন আমরা রাসূলুল্লাহ সা. কে তালাশ করার জন্য বের হলাম। অতঃপর আমরা হুযুর সা.কে পেলাম। তখন হুযুর সা. আমাকে বললেন, তুমি বল! আমি বললাম, কি বলবো? তখন হুযুর সা. বললেন, 

قل هو الله أحدٌ- قل أَعوذُ بربّ الفلق- قل أَعوذُ بربّ النّاس- 

(কুল হু আল্লাহু আহাদ, কুল আউযু বি রাব্বিল ফালাক, কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস) এ সূরা তিনটি সকাল-সন্ধায় তিনবার করে পড়ে নাও। এটা তোমার প্রতিটি বস্তুর জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (মিশকাত শরীফ : ১৮৮)

 

আমল নং-২। হাদীস : হযরত আবু দারদা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধা নি¤েœাক্ত দুআটি সাত বার পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার দুনিয়া এবং আখিরাতের সর্বপ্রকারের চিন্তা-পেরেশানীর জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। (রুহুল মাআনী, পৃ. ৫৩) 

দুআটি এই : সাতবার حسبى الله لآ اله الّا هوَ عليه توكلّتُ وهو ربُّ العرش العظيم. 

অর্থ : আল্লাহ তাআলা আমার জন্য যথেষ্ট, যিনি ব্যতীত আর কেউ মাবুদ হওয়ার উপযুক্ত নয়। আমি তার উপরই ভরসা করেছি এবং তিনি আরশে আযীমের মালিক।  (সূরা তওবা : ১২৯)


আমল নং-৩। হাদীস : হযরত মাকাল ইবনে ইয়াছার রাযি. বর্ণনা করেন, নবী কারীম সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাযের পর তিনবার-  اَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ العَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. 

পাঠ করতঃ সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত একবার পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে সত্তর হাজার ফিরিশতা নিযুক্ত করেন। উক্ত ফিরিশতাগণ সন্ধা পর্যন্ত মাগফিরাতের দুআ করতে থাকে। ঐ সন্ধার পূর্বে যদি তার মৃত্যু হয়, তবে তার শহীদের মর্তবা নসীব হবে। আবার যখন মাগরিব বাদ উপরোক্ত নিয়মে পাঠ করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার জন্য সত্তর হাজার ফিরিশতা নিযুক্ত করেন। উক্ত ফিরিশতাগণ তার জন্য সকাল পর্যন্ত মাগফিরাতের দুআ করতে থাকেন। আর যদি সে ঐ রাতে মৃত্যুবরণ করে, তবে তার শহীদি মৃত্যু নসীব হবে। (মিশকাত শরীফ-১৮৮)

প্রথমে তিনবার পাঠ করবে : اَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ العَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ.  অতঃপর একবার :
هو الله الّذى لآ اله الّا هو عالم الغيب والشّهادة هو الرّحمن الرّحيم- هو الله الّذى لآاله الّا هو الملك القدّوس السّلام المؤمن المهيمن العزيز الجبّار المتكبّر سبحان الله عمّا يشركون- هو الله الخالق البارئ المصوّر له الاسماء الحسنى يسبّح له ما فى السّموت والارض- وهو العزيز الحكيم.    
(সূরা হাশর : ২২-২৪) 

  

আমল নং-৪। হাদীস : হযরত আবান ইবনে উসমান রাযি. বর্ণনা করেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, নবী কারীম সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাযের পর এবং মাগরিবের নামাযের পর এই দুআ তিনবার পাঠ করবে, দুনিয়ার কোনো ব্যক্তি বা বস্তু তার ক্ষতি করতে পারবে না। (মিশকাত শরীফ : ২০৯) দুআটি এই (তিনবার) 

   بسمِ اللهِ الّذىْ لا يضرّ مع اسمه شيئٌ فى الارض ولا فى السّماء وهو السّميعُ العليْمُ.

অর্থ : আল্লাহর নামে (আমি সকাল/সন্ধা অতিবাহিত করলাম) যে নামের সাথে আসমান এবং জমিনের কোনো বস্তু ক্ষতি করতে পারে না এবং তিনি শ্রবণকারী ও সর্বজ্ঞ। 


আমল নং-৫। যে ব্যক্তি নি¤েœাক্ত দুআটি ফজরের নামাযের পর এবং মাগরিবের নামাযের পর তিন তিন বার পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা পাঁচটি জিনিসের হিফাজত করবেন। ১। তার দ্বীনের হিফাজত। ২। জানের হিফাজত। ৩। মালের হিফাজত। ৪। পরিবারের হিফাজত। ৫। সন্তানাদির হিফাজত। দুআটি এই (তিনবার) 

   بسمِ اللهِ على دينى ونفسى وولدى واهلى ومالى.

অর্থ : আল্লাহর নামের বরকত হোক আমার দ্বীনের উপর, আমার জানের উপর, আমার সন্তানাদির উপর, আমার পরিবারের উপর, আমার ধন-সম্পদের উপর। (কানযুল উম্মাল : ২/৬৩৬)


আমল নং-৬। হাদীস : হযরত আবু হুরাইয়া রাযি. বর্ণনা করেন, আমার নিকট রাসূলে খোদা সা. বলেছেন, لا حولَ ولا قوّةَ الّا باللهِ.

 এ দুআটি অধিক পরিমাণ পড়তে থাক। এটা জান্নাতের ভান্ডারের একটি অংশ। মিরাজের রাতে হযরত নবী কারীম সা.হযরত ইবরাহীম আ.-এর নিকট দিয়ে গমন করেন। তখন হযরত ইবরাহীম আ. বললেন, হে মুহাম্মাদ সা.! আপনার উম্মতগণকে আদেশ করুন, তারা যেন নি¤েœাক্ত দুআটি পাঠ করে জান্নাতের বাগিচাসমূহকে বর্ধিত করে নেয়। দুআটি এই : (বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব সাতবার করে) لا حولَ ولا قوّةَ الّا باللهِ.  (মিরকাত : খ. ৫)


আমল নং-৭। হাদীস : যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সা.-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি এ ইস্তিগফারটি পাঠ করবে তার গুনাহরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদিও সে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়নের গুনাহও করে থাকে। (তিরমিযী ও আবু দাউদ)

اَستغفِرُ اللهَ الّذى لا اله الّا هو الحىُّ القيُّوْمُ واَتُوبُ اِليهِ.

অর্থ : আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই, যিনি ব্যতীত কোনো মা‘বুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চির প্রতিষ্ঠাতা এবং আমি তাঁর নিকট তওবা করি।   


আমল নং-৮। سيّدُ الإستغفارِ বা  (শ্রেষ্ঠ তওবা) দৈনিক একবার-

হাদীস : হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সা. বলেছেন, সাইয়েদুল ইস্তিগফার (শ্রেষ্ঠ তওবা) হল, বান্দা আল্লাহ তাআলার দরবারে আরয করবে : 

   اللهمّ انت ربّى لآ اله الّا انت خلقتنى وانا عبدك وانا على عهدك ووعدك ما استطعتُ أعوذبك من شرّ ما صنعتُ ابوءلك بنعمتك علىّ وابوء بذنبى فاغفرلى فاِنّه لا يغفر الذّنوبَ اِلّا انتَ. 

অর্থ : আয় আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু! আপনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দা। আমি যথাসম্ভব আপনার অঙ্গীকার ও আপনার ওয়াদার উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি যে গুনাহ করেছি, তার ক্ষতি হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আমি আপনার নিয়ামতসমূহকে স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহসমূহকেও স্বীকার করছি। সুতরাং আমাকে মাফ করে দিন। কেননা আপনি ব্যতীত কেউই গুনাহসমূহকে ক্ষমা করতে পারে না। (বুখারী শরীফ : পৃ. ৯৩২-৯৩৩)


হাদীস : রাসূল আকরাম সা. বলেন, যে বান্দা ইখলাস ও বিশ^াসের সাথে দিনের কোনো এক সময় আল্লাহ তাআলার দরবারে উপরোক্ত দুআ করবে অর্থাৎ উপরোক্ত বাক্যগুলো দ্বারা তওবা করবে এবং সে দিনই (রাত আসার পূর্বে) ইন্তেকাল করবে, তবে নিঃসন্দেহে সে জান্নাতে যাবে। 

অনুরুপভাবে কেউ যদি রাত্রের কোনো এক সময় আল্লাহর দরবারে দুআ করে এবং সকাল হওয়ার পূর্বে ঐ রাতেই ইন্তেকাল করে, তবে নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। (সহীহ বুখারী-মা’আরিফুল হাদীস)

হাদীসের ব্যাখ্যা : এ ইস্তিগফারের এ রকম অসাধারণ ফযীলতের নিগুঢ় রহস্য দৃশ্যত: এই যে, উক্ত তওবার প্রত্যেকটি শব্দের দাসত্বের প্রাণ ও বাস্তবতা পরিপূর্ণ রুপে বিদ্যমান রয়েছে। 


আমল নং-৯। (সকাল-সন্ধায় ১ বার) يَا حيُّ يَا قيُّومُ بِرَحْمِتِكَ استغِيثُ’ اَصْلِحْ لِى شأْنِى كُلَّه’ ولا تَكِلْنِى الى نَفْسِى طَرْفَةَ عَيْنٍ.

অর্থ : হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার অনুগ্রহে সাহায্য-উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন, আর আমাকে আমার নিজের কাছে এক পলকের জন্যও সোপর্দ করবেন না। (আবু দাউদ-৫০৬৯)

ফযীলত : নবী কারীম সা. ফাতিমা রা.-কে ওসিয়ত করেছেন, তিনি যেন সকাল ও সন্ধায় এ বাক্যগুলো বলেন। 


আমল নং ১০। (সকালে ৩ বার) سُبحانَ اللهِ وبِحمدِه’ عَدَدَ خلقِه’ ورِضَا نَفسِه’ وزِنةَ عرشِه’ ومِدَادَ كَلماتِه.

অর্থ : আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, তাঁর সৃষ্টির সংখ্যার সমান, তাঁর নিজের সন্তোষের সমান, তাঁর আরশের ওজনের সমান ও তাঁর বাণীসমূহ লিখার কালি সমপরিমাণ। (মুসলিম-২৭২৬)

ফযীলত : ফজরের পর থেকে সকালে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নামাযের জায়গায় বসে থেকে আমল করার চেয়ে এই দু‘আ ১ বার বলা বেশী সাওয়াবের। সুতরাং অন্যান্য যিক্র ও দু‘আর পাশাপাশি উক্ত বাক্যগুলো বললে দ্বিগুন আমলের সাওয়াব অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ্। 


আমল নং ১১। (ফজরের নামাযের পর ১ বার) اَللهمَّ انّى اسْألُكَ عِلما نَافِعا. ورِزْقا طيِّبا. وعَمَلا مّتقبّلا.

অর্থ : হে আল্লাহ্ আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান এবং হালাল রিযিক ও কবুলযোগ্য আমল চাই। (ইবনে মাজাহ-৯২৫)

ফযীলত : রাসূলুল্লাহ্ সা. ফজরের নামাযের পর এ বাক্যগুলো বলতেন। ইমাম নববী ও আলবানী রাহ. এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। যদিও কেউ কেউ যঈফ বলেছেন। 


আমল নং ১২। (সন্ধায় ৩ বার) اَعُوذُ بِكلماتِ اللهِ التّآمّاتِ مِنْ شرِّ ما خَلَقَ.

অর্থ : আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের মাধ্যমে আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।  (ইবনে মাজাহ-৩৫১৮)

ফযীলত : যে ব্যক্তি সন্ধায় এ দু‘আটি ৩ বার বলবে সেই রাতে কোনো বিষধর প্রাণী তার ক্ষতি করতে পারবে না। 


আমল নং ১৩। (সকাল-সন্ধায় ৩ বার) رَضِيْتُ بِاللهِ ربّا. وَبالاسلامِ دِينا. وبِمحمّدٍ نبيَّا.

অর্থ : আমি সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন ও মুহাম্মাদ সা.-কে নবীরুপে গ্রহণ করেছি। (ইবনে মাজাহ-৩৮৭০)

ফযীলত : যে ব্যক্তি এ দু‘আ সকাল ও সন্ধায় ৩ বার করে বলবে, আল্লাহর কাছে তার প্রাপ্য হয়ে যায় কিয়ামতের দিন তাকে সন্তুষ্ট করা। 




আমল নং ১৪। (ফজর ও মাগরিবের পর ৭ বার) اَللهمَّ اَجِرْنى مِنَ النّارِ.

অর্থ : হে আল্লাহ্, আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন। (ইবনে হিব্বান-২০২২)

ফযীলত : ফজর ও মাগরিবের পর কারো সাথে কথা বলার পূর্বে ৭ বার এ দু‘আ পাঠ করলে সেদিনে বা সেই রাতে মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। 


আমল নং ১৫। (ফজরের পরে ও মাগরিবের পূর্বে প্রতিটি ১০০ বার করে) 

سبحانَ اللهِ  অর্থ : আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। ফযীলত : আল্লাহর রাস্তায় ১০০ উট দানের চেয়ে উত্তম।

الحمدُ للهِ   অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহর। ফযীলত : জিহাদের জন্য আরোহণকারীসহ  ১০০ অশ^ দানের চেয়ে বেশী উত্তম।

اللهُ اكبرُ    অর্থ : আল্লাহ সবচেয়ে মহান। ফযীলত : ১০০ কৃতদাস মুক্ত করার চেয়ে উত্তম।

(নাসায়ী: সুনানুল কুবরা-১০৫৮৮)


ফরজ নামাযের পরের আমল-১

اَسْتَغْفِرُ اللهَ- اَسْتَغْفِرُ اللهَ- اَسْتَغْفِرُ اللهَ-

অর্থ : আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। (সহীহ মুসলিম-৫৯১)

ফরজ নামাযের পরের আমল-২

اَللّهم انتَ السّلامُ ومنكَ السّلامُ تباركتَ ياذا الجلالِ والاكرامِ.

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিদাতা। একমাত্র তোমার নিকট থেকেই শান্তি পাওয়া যায়। তুমি বরকতময় হে মহাপরাক্রম ও সম্মানের অধিকারী! (সহীহ মুসলিম-৫৯১)

ফায়দা : হযরত ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. যখন নামায শেষ করতেন তখন ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলার পর এই দুআ পাঠ করতেন। 

ফরজ নামাযের পরের আমল-৩

اَللّهم اَعِنّي على ذِكركَ وشُكرِكَ وحُسنِ عِبادَتِكَ..

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে তোমার যিকির, শোকর ও উত্তম ইবাদতের ব্যাপারে সাহায্য করো। (সুনানে আবু দাউদ-১৫২২)

ফায়দা : হযরত মু‘আয বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. তার হাত ধরে বলেছেন, হে মু‘আয! আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি তোমাকে ভালবাসি। আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি তোমাকে ভালবাসি। অতঃপর বললেন, হে ম‘আয! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি কখনো নামাযের পর এই দু‘আ ছাড়বে না। 

ফরজ নামাযের পরের আমল-৪

لآ اله الّا اللهُ وحده لا شريك له. له الملك وله الحمد وهو على كلّ شيئ قدير. اللهمّ لا مانع لما اعطيت. ولا معطيَ لما منعتَ. ولا ينفع ذاالجدِّ منك الجدُّ.

অর্থ : আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য। তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা। সকল বিষয়ের উপর তিনি ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তা কেউ রোধ করতে পারে না, আর তুমি যা রোধ করতে চাও তা কেউ দিতে পারে না এবং কোনো মর্যাদাশীলকে তার মর্যাদা তোমার থেকে উপকার পৌঁছাতে পারে না।

 (সহীহ মুসলিম-৫৯৩) 

 ফরজ নামাযের পরের আমল-৫

اَللّهمّ اِنّيْ اعوذُبك من عذاب جهنّمَ ومن عذابِ القبرِ ومن فتنةِ المسيحِ الدَّجّالِ ومن فتنةِ المحيا والممَاتِ. 

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের শাস্তি থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কানা দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই হায়াত ও মওতের যাবতীয় ফিতনা থেকে। (সহীহ মুসলিম-৫৮৮) 

ফায়দা : হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যখন তোমাদের কেউ তাশাহহুদ পড়ে, তখন সে যেন চারটি জিনিস থেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চেয়ে উল্লিখিত দু‘আ পড়ে। 

বি.দ্র: উক্ত দু‘আ সালাম ফিরানোর পূর্বেও পড়া যায় এবং পরেও পড়া যায়। 


ফরজ নামাযের পরের আমল-৬

اَللّهمّ اِنّيْ اعوذُبك من البخلِ واعوذُبكَ من الجُبْنِ واعوذُبكَ اَنْ اُردَّ الى ارذَلِ العُمُرِ واعوذُبكَ من فتنةِ الدّنيا واعوذبكَ من عذابِ القبرِ.

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কৃপনতা থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দূর্বলতম বয়সে উপনীত হওয়া থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফিতনা থেকে এবং আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। (সহীহ বুখারী-৬৩৭০)


ফরজ নামাযের পরের আমল-৭ (আয়াতুল কুরসী)

اَللهُ لآ اله الّا هو الحيُّ القيُّومُ. لا تأخذُه سِنةٌ وَّلا نومٌ. له ما في السّموتِ وما فيِ الارضِ. منْ ذا الّذي يَشْفعُ عِنده الّا باذنِه. يعلمُ ما بين ايديهِمْ وما خلفهمْ. ولا يُحيطونَ بشيئ مّن علمه الّا بما شآء. وسِعَ كُرسِيُّهُ السّموتِ والارض. ولا يؤوده حِفظهما. وهو العليُّ العظيمُ.

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তাদের সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কিছুই জানে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া। তাঁর কুরসী সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। 

(সূরা বাক্বারা-২৫৫, নাসাঈ, সুনানে কুবরা-৯৮৪৮, সহীহ বুখারী-২৩১১, বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান-২৩৯৫)

ফায়দা : রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছু তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। (অর্থাৎ মৃত্যুর সাথে সাথেই বেহেশতে প্রবেশ করবে। )

আল্লাহ তার ঘর ও প্রতিবেশীদের ঘর নিরাপদ রাখবেন। 

বিঃদ্রঃ লম্বা দু‘আ সমূহ ফরজ নামাযের পর সুন্নত থাকলে সুন্নতের পরে পড়া উত্তম। 


ফরজ নামাযের পরের আমল-৮ (তাসবীহে ফাতিমী)

৩৩বার سبحانَ اللهِ  ৩৩বার الحمدُ للهِ  ৩৩বার اللهُ اكبرُ  অতঃপর ১বার

  لَا الهَ الّا اللهُ وحده لا شريكَ له. له الملك وله الحمدُ وهو على كلّ شيئ قديرٌ.

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব একমাত্র তাঁরই এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। 

ফায়দা : হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর  সুবহানাল্লাহ ৩৩বার, আলহামদুলিল্লাহ্ ৩৩বার, আল্লাহু আকবার ৩৩বার এবং উক্ত দু‘আটি ১বার পড়ে ১০০শত পূর্ণ করবে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। 

বিঃদ্রঃ এভাবে পড়ার কথাও হাদীসে রয়েছে। ৩৩বার سبحانَ اللهِ  ৩৩বার الحمدُ للهِ  ৩৪বার اللهُ اكبرُ   

ফায়দা : হযরত কা‘ব ইবনে উজরা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, নামাযের পর কিছু আমল এমন রয়েছে, যেগুলোর আমলকারী বঞ্চিত হয় না। (সহীহ মুসলিম-৫৯৬-৫৯৭)


ফরজ নামাযের পরের আমল-৯  

اللهمّ انّي اسئلكَ فِعلَ الخيراتِ. وتركَ المنكراتِ.

অর্থ : হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে ভালো কাজের তাওফীক দান করেন এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করেন। (আমালুস সুন্নাহ, অধ্যায়-১০ পৃষ্ঠা-১১৮)

এই দু‘আ পড়ে এরপর জরুরত অনুযায়ী দ্বীন ও দুনিয়ার যে কোন কাজে লাগবে। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url