আদর্শ সমাজ ও জাতি গঠনে পাঠাগারের ভূমিকা


إِنَّ الْحَمْدَ لِلهِ وَالصَّلوةُ لاَ هُلِهَا أَمَا بَعْدُ فَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ، فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ وقال الله تعالى ايضا قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " فَقِيهُ وَاحِدٌ اَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنْ أَلْفِ عَابِدٍ

হযরত আয়শা সিদ্দীকা রা. পাঠাগার কর্তৃক আয়োজিত অদ্যকার এই প্রতিযোগিতা মূলক বক্তৃতা মঞ্চের মান্যবর সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, সুদক্ষ পরিচালক এবং আমার সামনে উপবিষ্ট বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত আমার প্রাণ প্রিয় ছাত্রী বোনেরা! সকলকে ধন্যবাদ ও মোবারকবাদ জানিয়ে শুরু করছি নির্ধারিত বিষয়ের আলোচনা 

প্রিয় উপস্থিতি!

বর্তমানে যখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে পাশ্চাত্য দেশগুলো থেকে আমদানীকৃত অপসংস্কৃতি আর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি। লেখাপড়া বাদ দিয়ে ভারতীয় কার্টুন হয়েছে বাচ্চাদের খোরাকী। পাখি নামক জাহান্নামী ড্রেস হয়েছে নারীদের বাঁচার পুঞ্জি। বামপন্থি ও রামপন্থিদের ষড়যন্ত্রে যখন ভাঙতে শুরু করেছে সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থা। ঠিক তখন আদর্শ সমাজ ও জাতি গঠনে পাঠাগারের ভূমিকা শীর্ষক বিষয় নির্ধারণ করায় কর্তৃপক্ষকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ ও মোবারকবাদ। প্রিয় উপস্থিতি!

পাঠাগার হচ্ছে একটি জাতির রুচিবোধের পরিচায়ক। একটি জাতির রুচি কিরূপ তা পাঠাগার দেখেই বুঝা যায়। পাঠাগার একটি নীরব সমুদ্রের মত । তার গর্জন শুনা যায় না কিন্তু তার বক্ষে লুকিয়ে থাকে শত শত বছরের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমুদ্র। যুগ-যুগান্তরের উত্থান-পতন। মানুষ যদি তা নিজের মাঝে ধারণ করে, তাহলে যে কোন সময় যে কোন স্থানে বিপ্লব ঘটে যেতে পারে।

প্রিয় বন্ধুরা আমার! আদর্শ সমাজ ও জাতি গঠন করতে হলে যে কোন পাঠাগার হলেই চলবে না বরং সে পাঠাগার হতে হবে যে পাঠাগারে মুফতী তক্কী সাহেব ও রাফী উসমানী ভাতৃদ্বয় পড়েছেন । কিন্তু এরকম না হয়ে যদি হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবাল, তসলিমা নাসরিনের মত নাস্তিকদের বই দিয়ে পাঠাগার ভরে রাখা হয়, তাহলে এ পাঠাগার দ্বারা আদর্শ সমাজ তো দূরের কথা পুরো সমাজ ব্যবস্থাই ধ্বংস হয়ে যাবে। যুবক-যুবতীদের অধঃপতন ঘটবে। তাই ঐ সকল বই দ্বারা পাঠাগার সাজাতে হবে যে পাঠাগার সমাজ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে। যে পাঠাগার স্বচ্ছ-সুন্দর পরিচ্ছন্ন সমাজ উপহার দেবে। যে পাঠাগার পাঠকের হৃদয়বৃত্তিকে জাগ্রত করে তুলে মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাবে । । যে পাঠাগার পাঠকের বিভ্রান্ত-বিষণ্ণ মনকে আনন্দময় করে তুলবে। যে পাঠাগার তার পাঠকের মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করে দিবে। যে পাঠাগার সমাজের উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদেরকে যৌনতার পরিবর্তে ইসলামের দিকে ধাবিত করবে। যুবকদেরকে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী করবে । আর বৃদ্ধদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করবে । সর্বোপরি যে পাঠাগার সমাজের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়ে প্রতিটি ব্যক্তিকে সত্য-মিথ্যা এবং ভাল-মন্দ চিনতে, বুঝতে ও জানতে সহায়তা করবে।

 

প্রিয় উপস্থিতি!

আদর্শ সমাজ গঠনে পাঠাগারের ভূমিকা মুসলমানদের বুঝে না আসলে কুফফারদের ঠিকই বুঝে এসেছে। যদি মুসলমানরা তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানে । তারা যদি চিকিৎসা শাস্ত্রে ইবনে সিনার কি অবদান তা জানে । তারা যদি পদার্থ বিজ্ঞানে আল বেরুনীর কি অবদান তা জানে । দশর্ন, রসায়ন আর যুক্তিবিদ্যায় মুসলমানের কি অবদান তা জানে। তাহলে তারা মিলাদ মাহফিল আর শুধু খানকা নিয়ে পড়ে থাকবে না তখন তারা আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিবে। আমাদের সাম্রাজ্যবাদের রাজত্ব আর টিকবে না । এই কারণে তারা মুসলমানদেরকে পাঠাগারের বই পড়া থেকে বিমুখ করে মোবাইল, ইন্টারনেট, বলিউড আর হলিউডের ছবির দিকে ধাবিত করছে। পুরো মুসলিম সমাজকে তারা আজ নষ্টামী-নোংড়ামিতে ঢেকে রেখেছে। তাই যুব সমাজকে বলি, জাতির দুর্দিনে তোমাদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রান্তে আদর্শ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষদেরকে টেলিভিশন নামক শয়তানের বাক্স থেকে পাঠাগারমুখী করতে হবে। সাধারণ জনতার মনে সালমান খান আর ক্যাটরিনা কাইফের ঘৃণা সৃষ্টি করে পাঠাগারের ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে । যদি এসব করতে পারি তাহলে আর বাংলাদেশের পবিত্র ভূমিতে শাহরুখ খানের তাফালিং করা চলবে না। বাংলাদেশী মহিলারা হজ্জ করতে গিয়ে আরাফার ময়দানে স্টার প্লাস আর স্টার জলসার মত জঘন্য চ্যানেল খুঁজবে না । বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা বই পড়া বাদ দিয়ে সারারাত মোবাইলে ফেসবুক আর ইন্টারনেট চালাবে না ।

 

পরিশেষে সুস্থ বিবেকের অধিকারী ছাত্র সমাজকে বলতে চাই!

আসুন তসলিমার নষ্টামী আর পুশিদাহ রাজ এবং এই ধরনের হাবিজাবি বই পড়া বাদ দিয়ে সুস্থ রুচিবোধ সম্পন্ন লেখকদের বই পড়ে আদর্শ সমাজ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করি। তাহলেই সার্থক হবে আজকের সেমিনার । আল্লাহ আমাদের সকলকে আদর্শ সমাজ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন ।

نصر من اللهِ وَفَتْحٌ قَرِيْب - اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url