তাবলীগের ছয় নাম্বার ও মাগরিব এবং ফজর বাদ বয়ান।
তাবলীগের ছয় নাম্বার
হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রা:) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছোহবতে
থেকে বহুগুণ অর্জন করেছিলেন। তার মধ্যে কয়েকটি গুণের ওপর মেহনত করিয়া আমল করিয়া চলিতে
পারিলে পুরো দ্বীনের ওপর চলা খুব সহজ।
গুণ কয়েকটি হলো এই, ১. কালিমা। ২. নামায। ৩.
এলেম ও যিকির। ৪. একরামুল মুসলিমীন। ৫. তাসহীহে নিয়ত। ৬. দাওয়াত তাবলীগ।
(১) কালিমা
لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ
رَّسُوْلُ اللَّهِ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
অর্থ: "আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা'আলার রাসূল।
কালিমার উদ্দেশ্য
আমরা দু'চোখে যা কিছু দেখি বা না
দেখি আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই মাখলুক (সৃষ্টিজগত)।
মাখলুক (সৃষ্টিজগত) কিছুই করতে পারে না আল্লাহ তা'আলার হুকুম ছাড়া। আল্লাহ তা'আলা সবকিছু করতে পারেন
মাখলুক ছাড়া।
একমাত্র নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত ত্বরীকায় দুনিয়া ও
আখিরাতের শান্তি ও কামিয়াবি।
কালিমার লাভ
যে ব্যক্তি একীন ও এখলাছের সাথে এই কালিমা একবার পাঠ করবে, আল্লাহ পাক তার পিছনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিবেন।
যে ব্যক্তি প্রতিদিন এই কালিমা ১০০ বার পাঠ করবে আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তার চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জল করে উঠাবেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেন-
فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللهِ
وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا
অর্থ: সুতরাং যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং তা আঁকরে ধরে। আল্লাহ তা'আলা তাকে নিজ দয়া ও রহমতের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং নিজের কাছে পৌছানোর জন্য তাদেরকে
সরল পথ দেখান।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন
وَعَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ
مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ.
অর্থ: হযরত উসমান (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ
করে যে, সে (একীনের সাথে) জানে 'লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ' আল্লাহ ছাড়া কোনো মা'বুদ নাই।
সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সহীহ মুসলিম: হাদীস-১৩৬
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ (رض) قَالَ :
قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَسْعَدُ النَّاسِ
بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، خَالِصًا
مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ পেয়ে
সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবেন ওই ব্যক্তি যে খাঁটি দিলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, শিশুরা যখন কথা বলতে
শুরু করে তখন প্রথমে তাদেরকে কালিমা শেখাও।
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, সে পাক যাতের কসম!
যার হাতে আমার জীবন, যদি সমগ্র আসমান যমীন এক পাল্লায় রাখা হয়
আর কালিমায়ে শাহাদাত অপর পাল্লায় রাখা হয় তবে কালিমার পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান কোন ব্যক্তি দিনে রাতে যে কোন
সময় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে তার আমলনামা হতে পাপসমূহ মুছে তার পরিবর্তে নেকী
লেখা হয়।
কালিমা হাসীল করার ত্বরীকা
এই কালিমা আমি বেশী বেশী পাঠ করি আর কালিমার লাভ জানিয়া অপর ভাইকে দাওয়াত দেই ও
দুআ করি।
(২) নামায
নামাযের উদ্দেশ্য: হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে নামায পড়েছেন এবং
সাহাবাদেরকে যেভাবে নামায শিক্ষা দিয়েছেন, মেহনত করে ওইভাবে নামায পড়ার যোগ্যতা অর্জন
করার চেষ্টা করা।
নামাযের ফযীলত
যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে গুরুত্ব সহকারে আদায় করবে
আল্লাহ তা'আলা তাকে নিজ দায়িত্বে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلُوةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّبِرِينَ
অর্থ: হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ
তা'আলা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। সূরা বাকারা: আয়াত-
২৩৮
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
اتْلُ مَا أُوحِيَ
إِلَيْكَ مِنَ الْكِتٰبِ وَأَقِمِ الصَّلوةَ إِنَّ الصَّلوةَ تَنْهَى عَنِ
الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ
وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُوْنَ
অর্থ: আপনি আপনার ওপর নাযিলকৃত কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম
করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।
আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।
সূরা আন্কাবুত:
আয়াত ৪৫ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান-
عَنْ أَبِي مُوسَى
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ مَنْ صَلَّى الْبَرِيدِيْنَ دَخَلَ الْجَنَّةَ.
অর্থ: হযরত আবু
মুসা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডার (ফযর ও আসর)
নামায আদায় করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান-
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ (رض) أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ
الصَّلُوةُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا
بَيْنَهُنَّ مَا لَمْ تَعِشِ الْكَبَائِرَ.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ
ফরমান, পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং এক জুমু'আ
থেকে আরেক জুমু'আ এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সব গোনাহের জন্য
কাফফারা হয়ে যায় যদি সে কবীরা গোনাহের মাঝে লিপ্ত না হয়ে যায়।
সহীহ মুসলিম: হাদীস ৫৯৫
হযরত আবু হুরায়রা
(রা.) থেকে বর্ণিত, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, কোন ব্যক্তির জামাতের সাথে নামায আদায়
করার সওয়াব ঘরে কিংবা বাজারে একাকি নামায আদায়ের থেকে পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব। (বুখারী
শরীফ)
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যদি কোন ব্যক্তি উত্তমরূপে
অযু করে নামায আদায়ের নিয়তে মসজিদে গিয়ে দেখে যে নামায শেষ হয়ে গেছে তবুও সে জামাতে
নামায আদায় করার সওয়াব পাবে এবং জামাত প্রাপ্তদের নেকী বিন্দুমাত্রও কম করা হইবে না।
(আবু দাউদ)
অপর এক হাদীসে এরশাদ
বর্ণিত আছে, কষ্টের সময় অজু করা, মসজিদের দিকে গমন করা এবং এক নামাযের পর অন্য নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকা গোনাহসমূহকে
ধৌত করে দেয়। (জামিউস সগীর)
হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম
নামাযের হিসাব নেওয়া হবে। যদি নামায ঠিক সাব্যস্ত হয় তাহলে অন্যান্য আমলও ঠিক বলে প্রমাণিত
হবে। আর নামায যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তাহলে অন্যান্য আমল ও ত্রুটিপূর্ণ হবে।
হযরত আনাস (রা.)
হতে বর্ণিত, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রথম
তাকবীরের সাথে জামাতে নামায আদায় করবে তার জন্য দুটি পরওয়ানা লেখা হয়। একটি জাহান্নাম
হতে রক্ষা পাওয়া অপরটি মুনাফেকী হতে মুক্তি পাওয়া।(তিরমিযী)
হযরত হুযায়ফা (রা.)
বলেন,
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কঠিন সমস্যার
সম্মুখীন হতেন তখন নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন।
পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতে আদায় করি। ওয়াজিব, সুন্নত নামাযের পাবন্দি করি। উমরি কাযা থাকলে খুঁজে খুঁজে আদায় করি। নফল নামায
বেশি বেশি আদায় করি। আর নামাযের লাভ জেনে অপর ভাইকে দাওয়াত দেই এবং দুআ করি।
(৩) ইলম ও যিকির
ইলমের উদ্দেশ্য: আল্লাহ তা'আলার কখন কি আদেশ ও নিষেধ
তা জেনে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ত্বরীকা অনুযায়ী আমল করা।
ইলুমের লাভ: আল্লাহ তা'আলা এরশাদ ফরমান
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থ: (হে নবী) আপনি বলুন
যারা (ইল্ম) জানে আর যারা (ইল্ম) জানে না,
তারা কি সমান হতে পারে? (সূরা যুমার: আয়াত-৯)
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجْتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যাদেরকে ইলমে দ্বীন দান করা হয়েছে আল্লাহ
তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করিয়া দিবেন। আল্লাহ খবর রাখেন যা তোমরা কর। (সূরা মুজাদালাহ:
আয়াত ১১)
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান
عَنْ عُثْمَانَ (رض) عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ خَيْرُكُمْ مَّنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
অর্থ: হযরত উসমান
(রা.) বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরশাদ ফরমান, তোমাদের মধ্য সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে কুরআন
শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। বুখারী, হাদীস ৫০২৫
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ (رض)
، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَلَكَ
অর্থ: হযরত আবু
হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করার জন্য কোন
রাস্তা অবলম্বন করে আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জান্নাতের
রাস্তা সহজ করে দেন। মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯; বুখার, হাদীস হা. ৩৮
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করার
জন্য ঘর হইতে বাহির হয় সব সৃষ্টি তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করতে থাকে।
হযরত উকবা ইবনে
আমের (রা.) বলেন, আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি যদি কুরআন পাককে চর্মের (চামড়া) মধ্যে রেখে আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তাহলে তা পুড়বে
না। (দারেমী)-
হযরত ইবনে আব্বাস
(রা.) বলেন, যার অন্তরে কুরআনের শিক্ষা নাই তা বিরান
ঘরের সমতুল্য। (তিরমিযী)
ইলম শিক্ষা করার
জন্য যে ব্যক্তি ঘর হতে বের হয় এবং এই অবস্থায় মারা যায় আল্লাহ তা'আলা তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন।
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, তোমাদের মধ্যে কেউ কি এটা
পছন্দ করে যে, সে বাড়ি ফিরে তিনটি মোটা তাজা গর্ভবতি উটনি
তথায় পাবে, আমরা বললাম, নিশ্চয়ই আমরা তা পছন্দ করি। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নামাযের মধ্যে তিনটি আয়াত তেলাওয়াত করা তিনটি মোটা তাজা গর্ভবতি উটনি পাওয়ার হুযুর
সাল্লাল্লাহু আল চেয়ে উত্তম। (মুসলিম)
আমরা ইলম দুইভাবে শিখি, ফাযায়েলে ইলম ও মাসায়েলে
ইলম। ফাযায়েলে ইলম আমরা কিতাবী তা'লীমী হালকা থেকে শিখি আর
মাসায়েলে ইলম আমরা হক্কানি উলামায়ে কেরামদের খেদমতে থেকে শিখি। ইলমের লাভ জেনে নিজে
আমল করি এবং অন্য ভাইকে দাওয়াত দিই এবং দুআ করি।
যিকিরের উদ্দেশ্য:
সব সময় আল্লাহর ধ্যান খেয়াল অন্তরে পয়দা করা।
যিকিরের ফযীলত
যারা সর্বদা যিকিরে মশগুল থাকে তারা হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يَأَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًانَ وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً
وَأَصِيلًا
অর্থ: হে মুমিনগণ!
আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাক অধিক পরিমাণে এবং সকাল সন্ধ্যায় তার তাসবীহ পাঠ কর। সূরা
আহযাব: আয়াত-৪১ ও ৪২
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
فَاذْكُرُونِي
أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ
অর্থ: সুতরাং তোমরা
আমাকে স্মরণ করো। আমি তোমাদেরকে স্মরণ করবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো অকৃতজ্ঞ হয়ো
না।
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَثَلُ الَّذِي يَذْكُرُ رَبَّهُ
وَالَّذِي لَا يَذْكُرُ مَثَلُ الْحَيِّ وَالْمَيِّتِ
অর্থ: হযরত আবু
মুসা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরশাদ ফরমান যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার যিকির করে
আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার যিকির করে না তাদের উভয়ের দৃষ্টান্ত
হলো জীবিত ও মৃত্যুর মত। সহীহ মুসলিম- ৭৭৯; বুখারী- ৬৪০৭
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ (رض)
قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ
يَقُوْلُ أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا دَعَانِي
অর্থ: হযরত আবু
হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরশাদ ফরমান, আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমি আমার বান্দার নিকট তার ধারণা অনুযায়ী
আছি। আর যখন সে আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দেই। সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৭২২
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, আল্লাহ পাক বলেন, তুমি ফযরের নামাযের পরে ও আসরের নামাযের পর কিছুক্ষণ আমার যিকির করে নাও। আমি মধ্যবর্তী
সময়ে তোমার জন্য যথেষ্ট হব। সুখের সময় আল্লাহর যিকির করলে দুঃখের সময় আল্লাহ তাকে' স্মরণ করেন।
যিকির বেহেশতের
চারা গাছের সমতুল্য।
যিকির আল্লাহর সন্তুষ্টির
কারণ।
যিকির অন্তর থেকে
দুনিয়াবী চিন্তা ফিকিরকে দূর করে দেয়।
যিকির দিলকে যিন্দা
করে দেয়।
যিকির হাসীল করার ত্বরীকা
শ্রেষ্ঠ যিকির হলো
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আফজাল যিকির হলো কুরআন তেলাওয়াত করা। সকাল বিকাল তিন তাসবীহ আদায়
করা।
তিন তাসবিহঃ ১০০
বার سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا
اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَر (সুবহানাল্লাহী ওয়াল হামদুলিল্লাহ
ওয়ালা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর) ১০০ বার
ا اسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ
الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ (আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজী লা-ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়ুল
কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি পড়া) ১০০ বার اللَّهُمَّ صَلِّ
عَلَى مُحَمَّدِ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ وَعَلَى هِ وَأَصْحَابِهِ وَسَلَّمْ
تَسْلِيْمًا كَثِيرًا (উচ্চারণ বাংলা: আল্লাহুম্মা সাল্লি
আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মীয়্যি ওয়া আলা আলিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া সাল্লিম তাসলীমান
কাছীরা)
এই তাসবীহগুলো সকালে
তিনশত বার। বিকালে তিনশত বার আদায় করি। মাসনুন দুআগুলি ঠিকমত আদায় করি ও যিকিরের লাভ
জানিয়া অপর ভাইকে দাওয়াত দেই এবং দুআ করি।
(৪) ইকরামুল মুসলিমীন
ইকরামুল মুসলিমীনের উদ্দেশ্য: প্রত্যেক মুসলমান ভাইয়ের কীমত তথা মূল্য জেনে তার
সম্মান করা। হার মাখলুকের ইহসান করা।
ইকরামুল মুসলিমীনের ফযীলত যদি কোন ব্যক্তি কোন মুসলমান ভাইয়ের উপকার করার চেষ্টা
করে তবে আল্লাহ তা'আলা তাকে দশ বছরের ইতেকাফ
করার সাওয়াব দান করবেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
وَلَعَبْدٌ
مُؤْمِنٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ
অর্থ: একজন মুসলমান
ক্রিতদাসও একজন মুশরিকের তুলনায় অনেক ভালো যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
أَفَمَنْ كَانَ
مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًا لَا يَسْتَوْنَ
অর্থ: যে ব্যক্তি
মুমিন সে কি ওই ব্যক্তির মত হতে পারে যে ফাসেক। (বলা বাহুল্য তারা সমান হতে পারে না)
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
عَنْ عَائِشَةَ (رض) قَالَتْ
أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُنْزِلَ
النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ.
অর্থ: হযরত আয়েশা
(রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এই বিষয়ে আদেশ করেছেন যে, আমরা যেন মানুষের সাথে তাদের মর্যাদার দিকে লক্ষ রেখে আচরণ করি। সহীহ মুসলিম: হাদীস-১/৬
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ
اللهِ (رض) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا
يَرْحَمُ اللَّهُ مَنْ لَّا يَرْحَمُ النَّاسَ.
অর্থ: হযরত জারীর
ইবনে আবদিল্লাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যে মানুষের ওপর দয়া করে না আল্লাহ তা'আলা তার ওপর দয়া
করেন না।
সহীহ বুখারী, হা: ৭৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হা: ২৩১৯
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের
প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভাল কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের
প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে ইকরাম (সম্মান) করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ
ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন মেহমানদের (ইকরাম) সমাদার করে।
সহীহ মুসলিম- ৪৭
হযরত আবু হুরায়রা
(রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হলো। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের
কাছে লোক পাঠালেন। তারা জানালেন, আমাদের কাছে পানি ছাড়া
কিছুই না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি হুযুর সাল্লাল ওয়াসাল্লাম বললেন, কে আছো যে এই ব্যক্তিকে মেহমানদারি করাবে? এক আনসারি সাহাবী
বললেন আমি। এ কথা বলে তিনি মেহমানকে নিয়ে বাড়ী গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেহমানকে ইকরাম (সম্মান) কর। স্ত্রী বললেন বাচ্চাদের খাবার ছাড়া
আমাদের ঘরে কোন খাবার নেই। আনসারি সাহাবী বললেন তুমি খাবার প্রস্তুত কর এবং বাতি জালাও।
আর বাচ্চারা খাবার চাইলে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। সে বাতি জালালো, বাচ্চাদেরকে ঘুম পাড়ালো এবং সামান্য খাবার যা তৈরী ছিল উপস্থিত করলো। বাতি ঠিক
করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভে দিলেন। তার পর তারা স্বামী স্ত্রী দুজনই
অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মত শব্দ করতে লাগলেন। এবং মেহমানকে বুঝাতে লাগলেন যে তারাও
সঙ্গে খাচ্ছেন। তারা উভয়ে সারারাত ক্ষুধার্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন আল্লাহ তা'আলা তোমাদের গত রাতের আমল দেখে হেসে
দিয়েছেন অথবা বলেছেন খুশি হয়েছেন এবং এ আয়াত নাযিল করেছেন, "তারা অভাবগ্রস্ত সত্ত্বেও নিজেদের ওপর অন্যদেরকে অগ্রাধিকার দান করে যারা মনের
কৃপণতা থেকে মুক্ত তারাই সফল।"সূরা হাশর, আয়াত ৯; বুখারী: ৩৭৯৮
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, খাঁটি মুসলমান ওই ব্যক্তি
যাহার হাত ও মুখ হইতে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের
একটি হাজত (প্রয়োজন) পূর্ণ করবে। আল্লাহ তা'আলা তার ৭৩ (তিহাত্তর)টি
হাজত (প্রয়োজন) পূর্ণ করবেন।
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের
একটি প্রয়োজন মিটানোর জন্য অগ্রসর হবে এবং সাধ্যমত চেষ্টা করবে। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে দশ বছর ইতেকাফ করার নেকী দান করবেন।
হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাই ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষত্রুটি ঢেকে রাখে আল্লাহ
তা'আলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষত্রুটি ঢেকে রাখবেন এবং আল্লাহ তা'আলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দাকে সাহায্য করতে থাকবেন যতক্ষণ সে মুসলমান ভাইয়ের সাহায্য
করতে থাকে। (মুসলিম-আবু দাউদ)
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান যে ব্যক্তি মাখলুকের ওপর দয়া করে আল্লাহ তা'আলা তাদের ওপর দয়া করেন। তোমরা যমীনবাসিদের ওপর দয়া কর তাহলে আসমানবাসী তোমাদের
ওপর দয়া করবে। (আবু দাউদ)
ইকরামুল মুসলিমীন হাসীল করার ত্বরীকা
আমরা আলেমদের তাযীম করি, বড়দের শ্রদ্ধা করি। ছোটদের
স্নেহ করি। এর ফযীলত জানিয়ে অপর ভাইকে দাওয়াত দেই এবং দুআ করি।
(৫) তাসহীহে নিয়ত
তাসহীহে নিয়তের উদ্দেশ্য: আমরা যে কোন কাজ করি আল্লাহ তা'আলাকে রাজি-খুশী করার জন্য করি।
তাসহীহে নিয়্যতের ফযীলত নিয়্যত সহীহ করে সামান্য খুরমা খেজুর আল্লাহর রাস্তায় দান
করলে আল্লাহ তা'আলা সেটাকে বৃদ্ধি করে
উহুদ পাহাড় পরিমাণ নেকী দান করবেন। আর যদি নিয়ত সহীহ না করে পাহাড় পরিমাণও দান করে
তাহলে খুরমা পরিমাণও দান করার নেকী পাবে না।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
بَلَى مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَ
هُوَ مُحْسِنٌ فَلَةَ أَجْرُهُ عِنْدَ رَبِّهِ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ
অর্থ: হ্যাঁ যে ব্যক্তি নিজ চেহারা আল্লাহর
সামনে নত করবে এবং সে সৎকর্মশীল হবে সে নিজ প্রতিপালকের কাছে তার প্রতিদান পাবে। আর
এইরূপ লোকদের কোন প্রকার ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিত হবে না। সূরা বাকারা- ১১২
وَمَا أَسْأَلُكُمْ
عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى رَبِّ الْعَلَمِينَ
অর্থ: আমি এ কাজের
জন্য তোমার কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। আমার প্রতিদান তো কেবল সেই সত্তা নিজ দায়িত্বে
রেখেছেন বিশ্বজগত প্রতিপালন করেন।
হযরত উসামা (রা.)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একবার আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। তার সাথে সা'দ, উবাই ইবনে কা'ব ও মু'আয (রা.) ছিলেন। এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন এক কন্যার
পাঠানো খবর একটি লোক নিয়ে আসলো, যে তার পুত্র সন্তান মরণাপন্ন।
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটির মাধ্যমে কন্যাকে খবর পাঠালেন যে, আল্লাহর জন্যই যা তিনি নিয়ে যান। আর আল্লাহর জন্যই যা তিনি দান করেন। প্রত্যেকের
জন্য একটি সময় নির্ধারিত আছে। কাজেই সে যেন ধৈর্যধারণ করেন এবং সওয়াবের আশা করে। (বুখারী:
হাদীস- ৬৬০২)
হযরত আবু হুরায়রা
(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল আমর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ পেয়ে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান কোন ব্যক্তি
হবেন,
যে ইখলাসের সাথে অন্তর থেকে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু" বলেছেন।
সহীহ বুখারী, হাদীস-৯৯
হযরত সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির
জন্য যা কিছু ব্যয় করো না কেন, তোমাকে নিশ্চিতরূপে তার
প্রতিদান দেওয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও তারও।
হযরত আবু হুরায়রা
(রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরশাদ ফরমান, এক ভাই তার ভাইয়ের সাক্ষাতের জন্য অন্যগ্রামে
গেল। আল্লাহ তা'আলা তার জন্য পথে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করলেন।
সে ব্যক্তি যখন ফেরেশতার কাছে পৌছল। ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞাসা করলো তুমি কোথায় যাওয়ার
ইচ্ছা পোষণ করেছ? সে বলল, আমি এই গ্রামে আমার এক ভাইয়ের সাক্ষাতের জন্য যেতে চাই। ফেরেশতা বললেন, তার কাছে কি তোমার কোন অবদান আছে যা তুমি আরো বৃদ্ধি করতে চাও? সে বললো না। আমি তো শুধু আল্লাহর জন্য তাকে ভালবাসি। ফেরেশতা বললেন, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে (তার দূত হয়ে) তোমাকে জানানোর জন্য এসেছি যে, আল্লাহ তোমাকে ভালবাসেন যেমন তুমি তোমার ভাইকে তারই সন্তুষ্টির জন্য ভালবাসছ। মুসলিম
শরীফ: হাদীস- ২৫৬৭
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, এখলাসের সাথে অল্প আমলের
বদলা ও অনেক বড়। পক্ষান্তরে এখলাছ ছাড়া অধিক আমলেরও কোন বদলা পাওয়া যাবে না এবং আল্লাহ
তা'আলা আমলের মধ্যে শুধু সেই আমলই কবুল করেন যা একমাত্র তারই সন্তুষ্টির জন্য করা
হয়।
তাসহীহে নিয়ত হাসিল করার ত্বরীকা
আমরা প্রত্যেক কাজের শুরুতে নিয়ত সহীহ করি। কাজের মাঝে নিয়ত যাচাই করি। যদি ঠিক
থাকে তাহলে আলহামদুলিল্লাহ আর যদি ঠিক না থাকে তাহলে ইস্তেগফার পড়ে তা ঠিক করে নিই
এবং কাজের শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলি। আর তাসহীহে নিয়তের লাভ জেনে অপর ভাইকে দাওয়াত দেই
এবং দুআ করি।
(৬) দাওয়াত ও তাবলীগ
দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্য: আল্লাহর দেয়া জান, মাল ও সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে জান মাল ও সময়ের সহীহ ব্যবহার শিক্ষা করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يَأَيُّهَا
الرَّسُوْلُ بَلْغُ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ
অর্থ: হে রাসূল! আপনি তাবলীগ করুন যা আপনার রবের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে। (সূরা
মায়েদা-আয়াত-৬৭)
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
قُلْ هُذِهِ
سَبِيلِي ادْعُوا إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي
অর্থ: হে নবী আপনি বলে দিন। এটি আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই বুঝে শুনে একীনের সাথে। আমি ও আমার অনুসারিগণও দাওয়াত দেয়। (সূরা ইউসুফ- আয়াত ১০৮) আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَ مَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى
اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَ قَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
অর্থ: তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয় সৎকর্ম করে এবং বলে নিশ্চয় আমি মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা-মীম, আয়াত- ৩৩) আল্লাহ তা'আলা বলেন,
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ
تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ تَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
অর্থ: তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত। মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে পাঠানো হয়েছে।
তোমরা সৎকাজে আদেশ করবে ও মন্দ কাজে বাধা দিবে। এবং আল্লাহ তা'আলার প্রতি ঈমান আনবে।
সূরা আল ইমরান-
আয়াত ১১০ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو (رض) أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَلْغُوْا عَنِّي وَلَوْ آيَةً
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াতও যদি হয় তাহলে অন্যের নিকট তা পৌছে দাও।
হযরত আবু বাকরা
(রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(বিদায় হজ্জে) সাহাবিদের (রা.) উদ্দেশ্যে খোতবা দিচ্ছিলেন যে, আমি কি তোমাদেরকে আল্লাহর পয়গাম তাবলীগ করেছি (পৌছে দিয়েছি)? আমরা বললাম জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, হে আল্লাহ আপনি
সাক্ষী হয়ে যান। আর যারা এখানে উপস্থিত তারা যেন অনুপস্থিতদের কাছে (আল্লাহর পয়গাম)
তাবলীগ করে (পৌছে দেয়)।
বুখারী: হাদীস-
৭০৭৮;
মুসলিম : হাদীস- ১৬৭৯
হযরত আবু হুরায়রা
(রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি হেদায়েত ও সৎকাজের দাওয়াত দিবে, সে ওই লোকদের (আমল) সমান সওয়াব পেতে থাকবে যারা সেই সৎকাজের অনুসরণ করবে এবং অনুসরণকৃত
ব্যক্তিদের সওয়াব কমে যাবে না। এমনিভাবে যে গোমরাহীর দিকে দাওয়াত দিবে সে ওই লোকদের
আমলের গোনাহ পেতে থাকবে যারা সেই গোমরাহীর অনুসরণ করবে এবং এ কারণে সেই অনুসরণকৃত ব্যক্তিদের
গোনাহ কমে যাবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস-২৬৭৪
হযরত হুযায়ফা (রা.)
থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ
ফরমান,
মানুষ নিজের পরিবার, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে যে ফেতনায় পতিত হয়, নামায, সদকা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ তার সে পাপকে মুছে ফেলে।
সহীহ বুখারী, হাদীস- ৭০৯৯
হযরত আনাস (রা.)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, আল্লাহর পথে একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে
যা কিছু আছে সব কিছুর চেয়ে উত্তম। সহীহ মুসলিম, হাদীস-১৮৮০
হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায়
বের হয়ে নিজ প্রয়োজনে এক টাকা ব্যয় করে আল্লাহ তা'আলা তাকে সাত লক্ষ টাকা সদকা করার নেকী দান করেন এবং আল্লাহর রাস্তায় যে ব্যক্তি
একটি নেক আমল করবে তার জন্য উনপঞ্চাশ কোটি নেক আমলের সওয়াব দান করবেন।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস- ২৩০; আততারগীব: খণ্ড ১, পৃষ্টা ২৫৩
সূরা কুলামে দাওয়াতের
নেকীর বর্ণনা
সূরা কুলামের শানে নুযুল
ওলীদ ইবনে মুগীরা
(কাফের) নবীর শত্রু ছিল। একদিন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মক্কার
অলিতে গলিতে দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছিলেন। তখন সে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
পাগল বলে গালি দিয়েছিল। তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শান্তনা দেয়ার
জন্য আল্লাহ তা'আলা এ সূরা অবতীর্ণ করলেন। আর নির্দেশ দিলেন
আপনি দাওয়াত ও তাবলীগ করতে থাকুন এ তাবলীগের কাজের বিনিময়ে আপনাকে অগণিত নেকী দিবেন।
সূরা কলাম: আল্লাহ তা'আলা এরশাদ ফরমান,
ن وَ الْقَلَمِ وَ
مَا يَسْطُرُونَ مَا أَنْتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُونٍ وَ إِنَّ لَكَ
لَأَجْرًا غَيْرَ
অর্থ: নূ-ন এবং
কলাম আর সম্মানিত লেখক ফেরেশতাদের কসম! আপনার রবের অনুগ্রহে আপনি পাগল নন। আর নিঃসন্দেহে
আপনার এ (দাওয়াতের) কাজের এমন বিনিময় রয়েছে যা অগণিত। হিসাব করে শেষ করার মত নয়। সূরা
কলাম,
আয়াত- ১-৩
দাওয়াত ও তাবলীগ হাসীল করার ত্বরীকা
ওলামায়ে কেরাম বলেন, জীবনে তিন চিল্লা (চার
মাস) দিয়ে এ কাজ শিখতে হয় এবং বছরে এক চিল্লা মাসে তিনদিন ও দৈনিক আড়াই ঘণ্টা মেহনত
করে এই কাজকে ধরে রাখতে হয়। এ কাজ করার জন্য আমি তৈরী আছি। আপনারা তৈরী আছেন তো? ইনশাআল্লাহ।
এই দাওয়াত তাবলীগের মেহনত শেখার জন্য জীবনের প্রথম সুযোগেই একাধারে চার মাস। আলেম
হলে এক বৎসর সময় দিয়ে শিখতে হয়। সবাই নিয়ত করি।
মাগরিবের পর বয়ান ও তাশকীলের (জামাতগঠন)
নিয়ম
ভাই দোস্ত বুযুর্গ। আল্লাহর বড় মেহেরবানি যে, তিনি আমাদেরকে বিভিন্ন
গোত্র থেকে একত্রিত করে মসজিদে এনে মাগরিবের ফরয নামায আদায় করার তাওফিক দিয়েছেন।
এজন্য আল্লাহর দরবারে শোকর আদায় করি, বলি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তা'আলা বলেন, তোমরা যদি আমার নেয়ামতের শোকর আদায় কর তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের নেয়ামত বৃদ্ধি
করে দিব। আর যদি নেয়ামতের না-শোকর কর তাহলে জেনে রাখ, আমার আযাব বড় কঠিন। আল্লাহ আমাদের মাগরিবের নামায জামাতের সাথে আদায় করার এবং নামাযের
পরে দ্বীনের ফিকির নিয়ে বসার তৌফিক দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
সমস্ত মানুষের সুখ-শান্তি সফলতা আল্লাহ তা'আলা একমাত্র দ্বীন মানার ভিতরে রেখেছেন,
দ্বীন যিন্দেগীতে তখনই মানা সহজ হবে যখন দ্বীনের মেহনত করে অর্জন করতে পারব। সুতরাং
যে কেউ খাছ নিয়তে নিজের জান, মাল, সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে সহীহ তরিকায় মেহনত করবে। ইনশাআল্লাহ অতি সহজেই
তার পুরা দ্বীনের ওপর চলা সহজ হবে।
দ্বীন আল্লাহ তা'আলার নিকট বড় মাহবুব। দ্বীন
দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দাওয়াতের মাধ্যমে। দাওয়াত হচ্ছে ঈমানের মেহনত। হযরত
ঈসা (আ.) এর পর ছয়শত বছরের ঊর্ধ্বে দাওয়াত না থাকার কারণে কাফেরেরা কা'বা শরীফের ভেতর ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করেছিল। আবার তারাই ঈমান আনার পর মূর্তিগুলো
নামিয়ে ফেলেছিল।
ভাই দোস্তবুযুর্গ! হাদীস শরীফে এসেছে যে,
দুনিয়া হলো আখেরাতের ক্ষেত। দুনিয়ার জীবনে যে কেউ আল্লাহর আদেশকে মানবে নবীজীর
সুন্নতকে অনুসরণ করবে পরকালীন জীবনে সে শান্তির ঠিকানা জান্নাতে বসবাস করবে। আর যে
ব্যক্তি দুনিয়ার মোহে পড়ে আখেরাতকে ভুলে যাবে সে জান্নাতের আশা থেকে বঞ্চিত হবে। এই
দুনিয়া আমাদের আসল বাড়ী নয়। আমাদের আসল বাড়ী কবর, আমাদের আল্লাহর দরবারে ফিরে যেতে হবে। কবরে আমার সাথী কেউ হবে না। আমার আপনজন বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সহায় সম্পত্তি কিছুই সাথে যাবে না। যাবে শুধু নেক আমল। এ জগতে যে
যতটুকু কামাই করবে পরজগতে সে ততটুকু ভোগ করবে। দুনিয়া ভোগের জায়গা নয়; ভোগের জায়গা আখেরাত। যেমন আমাদের ক্ষেতসমূহ চাষের জায়গা ভোগের জায়গা নয়। যে ব্যক্তি
দুনিয়াতে কষ্ট করে ঈমান আমল মজবুত করবে সে আখেরাতে বাড়ি ফিরে মহা আনন্দে জান্নাতের
আরাম আয়েশকে ভোগ করবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের পেছনে মেহনত না করে শুধু দুনিয়ার চিন্তায়
ব্যস্ত থাকবে তাকে আসল বাড়ি আখিরাতে ফিরে কেবল কষ্ট ভোগ করতে হবে।
মেরে ভাই দোস্ত বুযুর্গ! ঈমান অত্যন্ত মূল্যবান জিনিস না দেখা বস্তুর ওপর বিশ্বাস
করার নাম হলো ঈমান। ঈমান দুনিয়ার কোথাও কিনতে পাওয়া যায় না। ঈমান মজবুত হওয়ার অন্যতম
মাধ্যম হলো দাওয়াত। দ্বীনকে টিকে রাখার জন্য দাওয়াত খুবই জরুরী। এই জন্য দাওয়াতের মেহনত
করার জন্য আমরা সবাই রাজি আছিতো ভাই ইনশাআল্লাহ।
দোস্ত বুযুর্গ, আল্লাহ সামান্য সময়ের জন্য
আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এ স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের ঈমান আমল মজবুত করে পরকালীন
জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য আল্লাহর দেয়া জান- মাল ও সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায়
বের হতে কোন কোন ভাই রাজি আছি? খুশি খুশি নাম লেখাই।
ফযর বাদ বয়ান
আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ
তা'আলার জন্য, যিনি অধমৃত ঘুম থেকে জাগ্রত করে ফযরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার তৌফিক দান
করেছেন। আমরা সবাই রাতে ঘুমে ছিলাম জাগ্রত হওয়ার কারোও শক্তি ছিল না। আল্লাহ আমাদের
জাগ্রত করেছেন। এ রাতে যাদের হায়াত শেষ হয়ে গেছে তারা জাগতে পরেনি। দুনিয়ার বাড়ী ছেড়ে
চিরনিদ্রায় আখেরাতের বাড়ীতে চলে গেছে। ইশার নামাযের পর দুনিয়ার মানুষ কয়েকটা দলে বিভক্ত
হয়ে যায়। কেউ রাত্রিকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করে ইবাদতে মগ্ন থাকে। কেউ চুরি ডাকাতিতে লিপ্ত
থাকে। কেউ যিনায় মশগুল ছিল। কেউ অসুস্থ অবস্থায় যন্ত্রণাময় রাত যাপন করেছে। কিছু মানুষ
ফযরের আযান শোনে উত্তমরূপে অযু করে মসজিদে এসে নামায আদায় করেছে। অনেক মানুষ এখনও ঘুমে
অচেতন রয়েছে। আর যারা নামায আদায় করতে পারেনি তারা ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা
কর যাকাত আদায় কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।
হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের
পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পরে নামায আদায় করে (অর্থাৎ, ফযর ও আসর) সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আরো বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ফযরের নামায জামাতের সাথে আদায় করবে সে আল্লাহর হেফাযতে থাকবে। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
যে ব্যক্তি ইশার নামায জামাতের সাথে আদায় করে সে যেন অর্ধরাত ইবাদতের সওয়াব পায়।
আর যদি ফযরের নামায ও জামাতের সাথে আদায় করে তাহলে সারারাত ইবাদতের সওয়াব পায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, মুসলমান যখন উত্তমরূপে অযু করে পাঁচওয়াক্ত নামায আদায় করে তখন তার গোনাহসমূহ এমনভাবে
ঝরে যায় যেমন গাছের পাতা ঝরে যায়। সুতরাং যারা নামাযে আসেনি তারা এ সমস্ত লাভ থেকে
বঞ্চিত হলো। এবং ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেল। যারা নামাযে আসেনি। তাদের নামাযে আনার দায়িত্ব
এখন আমাদের কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেন, তোমরা নিজেরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো এবং তোমাদের প্রতিবেশীকে জাহান্নামের
আগুন থেকে বাঁচাও। আমার মাধ্যমে যদি কোনো ভাই নামাযে আসে তাহলে তার নামায কবুল হোক
বা না হোক আমি কবুল নামাযের সওয়াব পাবো। এই লাভজনক কাজের জন্য কোন কোন ভাই রাজি আছি, খুশি খুশি দাঁড়িয়ে যাই।